আপনি কি চাকরিপ্রার্থী ?
উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে চাচ্ছেন কিংবা কোনো গবেষণা কাজে নিজেকে নিযুক্ত করতে চাচ্ছেন? এ সকল ক্ষেত্রে আপনার আবেদন এর প্রথম ধাপই হবে একটি প্রফেশনাল সিভি তৈরি। এ সিভিটি যাচাই এর মধ্য দিয়েই আপনার সিলেকশন কার্যক্রম টি শুরু হবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন একটা CV আপনার ক্যারিয়ার শুরুর জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ একটা ডকুমেন্টস! মার্জিত, দৃষ্টিআকর্ষণীয় একটি সিভি তৈরির খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েই আজকের লিখাটি।
একজন চাকরিপ্রার্থী ব্যক্তির জীবনবৃত্তান্ত হলো CV/Curriculum Vitae. সিভিতে ব্যক্তির পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা, কাজের দক্ষতা ও আগ্রহের বিষয়গুলো ফুটিয়ে তোলা হয়।
প্রফেশনাল সিভি এর ফরমেট (CV Format)
প্রফেশনাল সিভি আপনার চাকরি, উচ্চশিক্ষা, গবেষণা কিংবা কোনো বৃত্তির আবেদন এর জন্য প্রয়োজন। সাধারণত যেকোনো প্রফেশনাল কাজে নিজেকে নিযুক্ত করার শুরুতেই সিভি সাবমিট করে প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য নিজেকে তুলে ধরতে হবে।
তাই প্রতিযোগীতামূলক কোনো সেক্টরে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে সিভিকে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করার বিকল্প নেই।
এক কথায় সিভি হতে হবে মার্জিত, সাবলীল, স্পষ্ট, পরিচ্ছন্ন ও তথ্যসমৃদ্ধ।
CV, Resume & Biodata এর পার্থক্য কী?
সিভি (Curriculum Vitae), রিজিউম (Resume) এবং বায়োডাটা (Biodata) তিনটিই জীবনবৃত্তান্ত হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এদের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে যেটা না জানা থাকলে আমরা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারি।
তিনটির পার্থক্য বিস্তারিত আলোচনা করা হলো এ অংশে-
১. CV (সিভি): উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, এমফিল, পিএইচডি ইত্যাদিতে আবেদন এর ক্ষেত্রে নিজের যাবতীয় তথ্য দ্বারা বিস্তারিত যে ডকুমেন্টস তৈরি করা হয় তা হলো CV। এটি ২-১০ পৃষ্ঠা হতে পারে তথ্যের আলোকে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো লিমিটেশন নেই।
২. Resume (রিজিউম): চাকরির সুবাদে সংক্ষিপ্ত আকারে যে ডকুমেন্টস তৈরি করা হয় তা হলো Resume. এটি অবশ্যই ১-২ পৃষ্ঠায় হতে হবে।
৩. Biodata (বায়োডাটা): এটা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যক্তিগত সবধরনের তথ্য দ্বারা তৈরি ডকুমেন্টস। সাধারণত বিয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজন। তাই কোনো চাকরি ক্ষেত্রে বায়োডাটা সাবমিট করা মানে শুরুতেই বোকামি করে বসা।
এগুলোই মূলত পার্থক্য। তবে বাংলাদেশে সিভি (CV) এবং Resume (রিজিউম) এর আলাদা তেমন প্রয়োগ নেই। প্রায় ক্ষেত্রেই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
প্রফেশনাল সিভি লেখার নিয়ম
- Heading (শিরোনাম): সিভি লেখার শুরুতে শিরোনাম হিসেবে Curriculum Vitae/Resume ব্যবহার না করে নিজের নাম ব্যবহারের রীতি বর্তমানে অধিক প্রচলিত।
- Contact Info (যোগাযোগের ঠিকানা): নাম এর সাথে নিজের ঠিকানা, ফোন নং, ইমেইল এড্রেস দিতে হবে। LinkedIn প্রোফাইলের লিংক যোগ করা যেতে পারে।
- Photo (ছবি): পাসপোর্ট সাইজের একটি ফরমাল ছবি যুক্ত করতে হবে। ছবিটি অবশ্যই রুচিসম্মত ও মার্জিত হতে হবে। খেয়াল করতে হবে যেন অনেক পুরানো ছবি কিংবা ইনফরমাল কোনো ছবি দেয়া না হয়। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা, হালকা নীল হতে পারে।
- Career Objectives ক্যারিয়ারের উদ্দেশ্য): এ অংশে আপনার ক্যারিয়ারের মূল উদ্দেশ্য, কী করতে চাচ্ছেন, আগ্রহের বিষয় একেবারে সংক্ষেপে তুলে ধরবেন। এই অংশটি আকর্ষণীয় হওয়াটা জরুরি। তবে অবশ্যই চাকরিভেদে/ক্ষেত্রভেদে এটা পরিবর্তন করে নিতে হবে। কেননা আপনার ক্যারিয়ার এর লক্ষ্য যদি সংশ্লিষ্ট ফিল্ডের সাথে মিলে যায় তাহলে ওই ফিল্ডে আপনি সিলেক্টেড হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেড়ে যায়। তবে লেখাটি ২-৫ লাইনের মধ্যে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
- Work Experience (কাজের অভিজ্ঞতা): এটি একটি চুম্বক অংশ। সব প্রতিষ্ঠানই চায় সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে। তাই আপনার ক্যারিয়ার জীবনে ছোটোবড় যে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করা হয়েছে তার অভিজ্ঞতা সুন্দর করে গুছিয়ে লিখুন।
- Educational Qualification (শিক্ষাগত যোগ্যতা): শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে আপনার সবধরনের ডিগ্রির তথ্য লিখতে হবে। সর্বশেষ ডিগ্রি শুরুতে লিখে এরপর অন্যান্য সবগুলো ডিগ্রি তুলে ধরতে হবে। লেখার ক্ষেত্রে কোর্সের নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম, মেয়াদ, পাশের সন, ফলাফল বিস্তারিত লিখতে হবে। এ অংশটি ছকাকারে লিখতে পারেন।
- Others Skill & Training (অন্যান্য দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ): আপনার কোন কোন দক্ষতা রয়েছে সেগুলো লিখুন। যেমন- কম্পিউটার স্কিল, কোনো সফটওয়্যারের কাজে পারদর্শিতা, ভাষাগত দক্ষতা ইত্যাদি। বিশেষ কোনো ট্রেনিং করে থাকলে সেটাও এ অংশে তুলে ধরতে পারেন। বাড়তি কোনো স্কিল আপনাকে অন্যদের চেয়ে একধাপ এগিয়ে রাখতে সহযোগী হতে পারে।
- Hobbies (শখ): আপনার গঠনমূলক পছন্দের কাজ বা শখগুলো যুক্ত করুন। খারাপ কোনো কাজ শখ হয়ে থাকলে অবশ্যই তা লিখবেন না, কারণটা বুঝতেই পারছেন হয়তো।
- Activities (কার্যক্রম): হতে পারে আপনি কোনো সামাজিক, আন্তর্জাতিক সংগঠন এর সাথে কাজ করেছিলেন। এটা এই কলামে দিতে পারেন। এছাড়া আপনার বিশেষ কোনো অর্জন, সম্মাননা থাকলে উল্লেখ করতে পারেন।
- References (সম্পর্ক): এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তবে অনেকেই এটি স্কিপ করেন অনেক সময়। রেফারেন্স হচ্ছে আপনি যে তথ্য গুলো দিচ্ছেন তা সঠিক কি-না যাচাই করতে একজন বা দুজন ব্যক্তির নাম, পরিচয় দেয়া। যিনি আপনার সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন। আপনার তথ্যগুলোকে রেফারেন্সের মাধ্যমে মজবুত করে নেয়া যায়, তাই এটি একদমই বাদ দেয়া ঠিক হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, আপনার সুপারভাইজারের তথ্য দিতে পারেন তবে অবশ্যই তাঁর অনুমতি নিয়ে দিতে হবে।
- Signature & Date (স্বাক্ষর & তারিখ): সবশেষে, উপরের তথ্যগুলো সত্য এ মর্মে আপনার স্বাক্ষর এবং তারিখ দিন।
আকর্ষণীয় CV কেমন কেমন হয়?
একটি আধুনিক, দৃষ্টি আকর্ষণীয় সিভি প্রস্তুত করতে যে বিষয় গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে–
১. Font (ফন্ট): ফরমাল সিভিতে Calibri, Arial, Times New Roman ফন্ট ব্যবহার করাটা স্ট্যান্ডার্ড। তবে Times New Roman ফন্টই বেস্ট।
২. Font Size (ফন্ট সাইজ): ফন্ট সাইজ ১০-১২ হতে পারে। শিরোনাম ১৪-১৬ সাইজে হলে ভালো।
৩. Layout (লেআউট): A4 সাইজের ভালো মানের কাগজে প্রিন্ট করতে হবে। দু পাশে ১ ইঞ্চি পরিমাণ ফাঁকা (Margin) জায়গা রেখে। CV তে অতিরিক্ত রং এবং ডিজাইন ব্যবহার না করাই সবচেয়ে উত্তম।
৪. Length (সিভির দৈর্ঘ্য): যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত আকারে গুছিয়ে লিখতে পারাটা ভালো।
৫. Email (ইমেইল ব্যবহার): প্রফেশনাল সিভি আপনি যেখানেই সাবমিট করেননা কেন, আপনার সাথে যোগাযোগের স্মার্ট মাধ্যম ইমেইল। তাই অবশ্যই ইমেইল এড্রেস দিতে হবে। তবে নিজের নাম ব্যবহার করে ইমেইল এড্রেস তৈরি করা ভালো, দৃষ্টিকটু কোন নাম ব্যবহার করা যাবে না।
৬. PDF or Word file (কোন ফরমেটে হবে): সফট বা ডিজিটাল কপি সাবমিশন এর ক্ষেত্রে সব সময় PDF file ফরমেটে সিভি পাঠাবেন, যদি না Word file আকারে পাঠাতে বলে।
কীভাবে নিজেই সহজে ঘরে বসে সিভি তৈরি করতে পারি
ছোটোখাটো কোনো প্রয়োজন হলেই কম্পিউটারের দোকানে ছুটে যাওয়ার সময় এখন আর নেই। এখন প্রায় সবার কাছেই উপকরণ আছে, একটু চেষ্টা করলে ঘরে বসেই আপনার সিভিটি নিজে তৈরি করে ফেলতে পারেন।
- MS Word এ সিভি তৈরি: Microsoft Word এ সিভি তৈরির বেশ কিছু ফরমেট দেয়া থাকে, চাইলে এগুলো ব্যবহার করে তৈরি করা যেতে পারে কিংবা নিজেও একটি ফরমেট করে নেয়া যায়। এখন Microsoft power point দিয়েও বিভিন্ন ধরনের শেইপ দিয়ে চমৎকার সিভি তৈরি করা যায়।
- CV building website দ্বারা: গুগলে সার্চ করলে অনেক সিভি তৈরির ওয়েবসাইট পাওয়া যাবে। পছন্দমতো ডিজাইনে এখানেও CV তৈরি করা যায়।
- Mobile App এর মাধ্যমে: মোবাইলে সিভি তৈরির App এর মাধ্যমে সহজেই প্রফেশনাল একটি সিভি তৈরি করে ফেলতে পারেন।
প্রফেশনাল সিভি তৈরির ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা
- সিভি লেখার সময় বানান, ভাষা, বাক্য ব্যবহারছ সচেতন থাকুন।
- বারবার তথ্যগুলো চেক করার মাধ্যমে নির্ভুল করে তৈরি করুন।
- আপনি যে স্থানে কাজের জন্য সিভি তৈরি করছেন সে প্রতিষ্ঠানের কাজের সাথে সমন্বয় করে অভিজ্ঞতা, আগ্রহ গুলো উল্লেখ করুন।
- সিভিতে সহজ, ছোটো, স্পষ্ট বাক্যের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করুন। অহেতুক কঠিন ভাষা পরিহার করুন।
- প্রতিবার সিভি কোথাও দেয়ার পূর্বে তথ্য আপডেট করে নিন।
সিভি তৈরির কাজটি কখন করলে ভালো হয়?
আমরা জানি যে কোথাও আবেদনের সময় সিভি দিতে হবে, কিন্তু সিভির যে কন্টেন্ট তা তৈরির কাজ অনার্স এর শুরু থেকেই করতে হয়। তাই অনার্স এর শুরুতেই যদি কেউ একটা সিভি রেডি করে ফেলে এবং প্রতিবছর সেটা আপডেট করে, তাহলে কাজ করতে করতেই আরো বেশকিছু কোয়ালিটি অর্জন করার প্রেরণা কাজ করবে, সাথে সিভিটাও তৈরি করার অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে।
শেষ কথা
পরিশেষে বলবো একটা সিভি আপনার মেধা, ক্রিয়েটিভিটি, দক্ষতা অপরিচিত কারো কাছে তুলে ধরতে পারে। তাই অন্য কারো সিভি কপি না করে বরং একটু মনোযোগ দিয়ে নিজের সিভি নিজেই তৈরি করে নিই।
হতে পারে একটি সুন্দর বাক্য, কিংবা নিজেকে সিভিতে প্রকাশভঙ্গি আপনার সামনের সময়টাকেই পাল্টে দিচ্ছে, অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখছে কয়েক ধাপ।
how to write resume for job, how to make a resume for students
সূত্র : studykoro.com ওয়েবসািইট।
0 Comments