ফ্রিল্যান্সিং (FREELANCING বাংলায় মুক্ত পেশা বা স্বাধীন পেশা। অর্থাৎ, কোন প্রতিষ্ঠান বা ধরাবাধা নিয়ম কানুনের ভিতর না থেকে স্বাধীন বা মুক্ত ভাবে কাজ করা। অন্যান্য পেশার মানুষদের তুলনায় এই পেশার কাজের ধরন ও উপার্জন অনেকটাই ভিন্ন।

গতানুগতিক পেশা থেকে বেরিয়ে ভিন্ন ধারার এই মুক্তপেশা এখন তরুনদের অন্যতম সেরা পছন্দ। এখানে নেই কোন ধরাবাধা নিয়ম কানুন। নেই কোন সময়ের নির্দিষ্টতা। সব থেকে মজার বিষয় হল একটি কম্পিউটার/মোবাইল আর ইন্টারনেট হলেই অনায়াসে যেকোন জায়গায় বসে কাজ করা যায়। 

আর ইনকাম? সেটা অন্য যেকোন পেশার চেয়ে দ্বিগুন, তিনগুন বা বহুগুন। তুলনামুলক কম সময় দিয়ে অনেক অর্থ উপার্জন সম্ভব তাই এটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় পেশা। রয়েছে কাজের ভিন্নতা ও নিত্য নতুন মজার জিনিস শেখার ও জানার সুযোগ।



কেন করবেন ফ্রিল্যান্সিং?

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি ফ্রিল্যান্সিং একটি জনপ্রিয় ও আকর্ষনীয় পেশা। কিন্তু কেন? আসুন জেনে নেই কেন করবেন ফ্রিল্যান্সিং।

  • ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ
  • তুলনামুলক কম সময়ে বেশি ইনকাম
  • সময়ের বাধ্যবাধকতা নাই
  • নিজেই নিজের বস
  • যেকোন যায়গায় বসে কাজ করার সুযোগ
  • বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে কাজের সুযোগ
  • পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ
  • অনলাইনে সব সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়
  • পরিবারকে সময় দেওয়া যায়
  • নিত্য নতুন বিষয় শেখার ও জানার সুযোগ
  • স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর সুযোগ

উপরোক্ত কারণ গুলোই ফ্রিল্যান্সিং এর জনপ্রিয়তার মুল কারণ।

ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্র

বর্তমানে বিভিন্ন কাজ ফ্রিল্যান্সিং হিসাবে করা যায়। তাদের ভিতর বেশ কিছু তুমুল জনপ্রিয়। সেগুলো হল-

  • ওয়েব ডিজাইন
  • গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • এফিলিয়েট মার্কেটিং
  • ডাটা এন্ট্রি
  • এডমিন সাপোর্ট
  • ভার্চুয়াল এসিস্টেন্ট
  • কন্টেন্ট রাইটিং
  • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
  • সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
  • কোল্ড কলিং
  • অনলাইন রিসার্চ, ইত্যাদি।


কোথায় করবেন? মার্কেটপ্লেস-

বর্তমানে বেশ কিছু মার্কেটপ্লেস বা ফ্রিল্যান্সিং কাজের যায়গা রয়েছে। মার্কেটপ্লেস গুলোর রয়েছে ব্যভার ভিন্নতা। একেকটি একেক ধরনের হওয়ায় ফ্রিল্যান্সাররা তাদের চাহিদা অনুযায়ী বেছে নেয় পছন্দের মার্কেটপ্লেস। এগুলোর ভিতর কিছু মার্কেটপ্লেস তুমুল জনপ্রিয়। যেমন-

১। আপওয়ার্ক (https://www.upwork.com)

আপওয়ার্ক  (https://www.upwork.com) marketplace photo
আপওয়ার্ক (https://www.upwork.com) marketplace

অনলাইনে বেশ কিছু মার্কেটপ্লেসের ভিতর জনপ্রিয়তার শীর্ষে আপওয়ার্ক। বাংলাদেশের বেশির ভাগ ফ্রিল্যান্সার দের অন্যতম পছন্দ আপওয়ার্ক। পুর্বে ইল্যান্স ও ওডেক্স সম্মিলিত ভাবে আপওয়ার্ক নামে যাত্রা শুরু করে। অন্য মার্কেটপ্লেসের চেয়ে এটি সর্বাপেক্ষা ফ্রিল্যান্সার বান্ধব। তাই ফ্রিল্যান্সারদের প্রথম পছন্দ আপওয়ার্ক।

বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্ট ও আপওয়ার্ক কে পছন্দ করে কারণ এটি আর্থিক সিকিউরিটি ও কাজের গুনমানের নিশ্চয়তা দেয়। ক্লায়েন্ট ও ফ্রিল্যান্সার দের মধ্যে খুব ভালো সমন্বয় করে। ফ্রিল্যান্সার দের দক্ষতা যাচাই করার জন্য মেসেজের পাশাপাশি রয়েছে অডিও ও ভিডিও কলের মাধ্যমে ইন্টারভিউ নেওয়ার ব্যবস্থা। মুলত এই কারনেই ক্লায়েন্টদের মাঝে এটি বেশি জনপ্রিয়।

কার্যপদ্ধতিঃ

১। আপওয়ার্ক এর কার্যপদ্ধতি শুরু হয় ক্লায়েন্ট এর জব পোস্টের মাধ্যমে। ক্লায়েন্ট তার চাহিদা অনুযায়ী জব পোস্ট করে। জব পোস্টের সময় বিভিন্ন ফিল্টার যোগ করা যায়

যেমন-

  • কোন দেশের ফ্রিল্যান্সার রা আবেদন করতে পারবে
  • কত সময়ের ভিতর কাজ শেষ করতে হবে
  • বাজেট কত
  • কত লেভেল এর ফ্রিল্যান্সার রা আবেদন করতে পারবে
  • ফ্রিল্যান্সার এর কি কি যোগ্যতা থাকা আবশ্যক
  • ঘন্টা চুক্তি বা প্রজেক্ট চুক্তি

২। ক্লায়েন্ট জব পোস্ট করার পর তার ইচ্ছা মত ফ্রিল্যান্সারদের ইন্টারভিউ এর জন্য অফার পাঠাতে পারেন বা একই ক্যাটাগরির ফ্রিল্যান্সার জব পোস্ট টি দেখে আবেদন করতে পারেন

৩। ক্লায়েন্ট আবেদন গুলো পড়ে আগ্রহী হলে মেসেজ দেন এবং ঐ কাজের জন্য প্রোয়োজনীয় দক্ষতা যাচাই বাছাই করেন।

৪। যাচাই বাছাই শেষে ক্লায়েন্ট নির্বাচিত প্রার্থী কে অফার পাঠান কাজের।

৫। ফ্রিল্যান্সার অফার এক্সেপ্ট করলে কাজ শুরু হয়ে যায়

ঘন্টা চুক্তি হলে টাইম ট্রাকার নামক সফটওয়ার চালিয়ে কাজ করতে হয়। এটি প্রতি মিনিটে ক্লায়েন্টের পুর্বে জমা কৃত টাকা থেকে কাটতে থাকে এবং ফ্রিল্যান্সারের একাউন্টে জমা হতে থাকে। কাজ শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট সময় পর এটি পর্যায়ক্রমে ফ্রিল্যান্সার এর উত্তোলন যোগ্য অর্থ হিসাবে জমা হয়।

প্রযেক্ট চুক্তি হলে কাজ জমা দেওয়ার পর ক্লায়েন্ট এক্সেপ্ট করলে বা নির্দিষ্ট সময় পর স্বয়ংক্রিয় ভাবে ফ্রিল্যান্সারের একাউন্টে অর্থ জমা হয়।

উভয় ক্ষেত্রেই কাজের গুনমান যাচাই বাছাইয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে। এবং নির্ধারিত হয় ফ্রিল্যান্সার পাবে কি না।

আবেদন প্রক্রিয়াঃ

ক্লায়েন্ট জব পোস্ট করার পর ফ্রিল্যান্সার কে আবেদন করতে হয়। তার জন্য প্রয়োজন কানেক্ট। অর্থাৎ, ফ্রিল্যান্সার কে আগে থেকে তার একাউন্টে কানেক্ট কিনে রাখতে হয়।

প্রতিটি জব এপ্লিকেশন এর জন্য কাজের বাজেট অনুযায়ী ২, ৪ বা ৬ টি করে কানেক্ট খরচ হয়। কানেক্ট কিনতে হয় PayoneerPaypal বা অন্য ডুয়েল কারেন্সির একাউন্ট দিয়ে।

অবশ্যই জানুনঃ কিভাবে পেওনিয়ার (Payoneer) এ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন

অবশ্যই জানুনঃ EBL Aqua Card কি

আপওয়ার্ক কমিশনঃ

২০%

ফ্রিল্যান্সার র‍্যাঙ্কঃ

  • রাইজিং ট্যালেন্ট
  • টপ রেটেড
  • টপ রেটেড প্লাস

পেমেন্ট মেথডঃ

Payoneer, Paypal, etc.

ওয়েবসাইটwww.upwork.com

সিক্রেট টিপ্সঃ

১। মধ্যরাত বিড করার উপযুক্ত সময়
২। ৫ স্টার রেটিং নতুন কাজ পেতে সাহায্য করে
৩। নতুন ক্লায়েন্ট দের জব এ বিড করলে নতুনদের কাজ পাবার সম্ভাবনা বেশি।

২। ফাইভার (www.fiverr.com)

ফাইভার বিশ্বের অন্যতম আরেকটি মার্কেটপ্লেস। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে এটিকে দ্বিতীয় অবস্থানে ধরা হয়। বিশ্বের বহুসংখ্যক মানুষ তাদের কাজ ভার্চুয়ালি করিয়ে নিচ্ছে ফাইভারের সাহায্যে।

এই মার্কেটপ্লেসটি শুরুর দিকে ছিল ৫ ডলারের কাজের জন্য জনপ্রিয়। ক্রমশ তারা তাদের পরিসর বাড়িয়েছে। এখন হাজার হাজার ডলারের এ মার্কেটপ্লেস জনপ্রিয়তা ও বিশ্বাসের তুঙ্গে। অন্যান্য মার্কেটপ্লেস গুলোর মত এখানে কাজ পেতে গেলে কোন খরচ করতে হয়না তাই এটি ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে।

কার্যপদ্ধতিঃ

ফ্রিল্যান্সার দের এখানে একটি বাধ্যতামূলক একাউন্ট থাকতে হবে। এখানে সার্ভিস সেলিং এর প্রধান উপকরণ হল গিগ। অর্থাৎ, ধরুন আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনার। আপনি লোগো ডিজাইন, ব্রোশার ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, ও ইনফোগ্রাফিক্স ডিজাইন করেন।

এগুলোকে আলাদা আলাদা ভাবে একেকটি গিগের মাধ্যমে সাজাতে পারেন। প্রতিটা গিগে থাকবে সার্ভিস এর নাম, সার্ভিসের বর্ণনা, মুল্য, সময়কাল, ইত্যাদি। প্রতিটা সার্ভিসের জন্য আলাদা আলাদা গিগ। একেকটি ক্যাটাগরিতে গিগ গুলো তৈরী করতে হয়।

স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার ও অন্যান্য অনেক উপায়ে গিগ মার্কেটিং করা যায়। ফলে গিগ র‍্যাঙ্ক করে। ক্লায়েন্ট নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি তে সার্চ দেয় এবং তুলনামুলক সার্চ রেজাল্টের উপরের দিকের গিগ গুলো বেশি প্রায়োরিটি পায়। তাই সুন্দর ভাবে গিগ সাজানো অত্যাবশ্যক।

১। সমস্ত তথ্য দিয়ে প্রোফাইল তৈরী করা ও ১০০% সম্পন্ন করা
২। সঠিকভাবে তথ্য দিয়ে SEO ফ্রেন্ডলি কিওয়ার্ড দিয়ে গিগ বানানো
৩। দৃষ্টি আকর্ষনীয় গিগ ইমেজ তৈরী করা
৪। গিগ মার্কেটিং করা
৫। বায়ার রিকুয়েস্ট পাঠানো
৬। সব সময় একটিভ থাকা

পর্যায়ক্রমে উপরোক্ত প্রক্রিয়া গুলো ফলো করলে গিগ আস্তে আস্তে র‍্যাঙ্ক করে ও বায়ার বা ক্লায়েন্ট নক করে এবং কাজ পাওয়া যায়।

ফাইভার কমিশনঃ

২০%

ফ্রিল্যান্সার র‍্যাঙ্কঃ

  • নিউ সেলার
  • রাইজিং ট্যালেন্ট
  • লেভেল-১ সেলার
  • লেভেল-২ সেলার
  • টপ রেটেড সেলার

পেমেন্ট মেথডঃ

Payoneer, Paypal, etc.

ওয়েবসাইট: www.fiverr.com

সিক্রেট টিপসঃ

১। সবসময় একটিভ থাকা বাঞ্ছনীয়
২। ৫ স্টার রেটিং নতুন কাজ পেতে সাহায্য করে
৩। যত দ্রুত সম্ভব প্রথম কাজ পাওয়া উচিত
৪। গিগ মার্কেটিং নতুন কাজ পেতে সাহায্য করে।

৩। ফ্রিল্যান্সার (www.freelancer.com)

ফ্রিল্যান্সার অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি মার্কেটপ্লেস যা ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সার মূলত নিখুঁত কাজের জন্যই বায়ার মহলে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

মূলত এখানে ক্লায়েন্ট জব পোস্ট করে ২ টি উপায়ে। কনটেস্ট বা প্রোজেক্ট। পুর্বে কনটেস্ট অধিকতর জনপ্রিয় থাকলেও বর্তমানে প্রোজেক্ট আকারেও অনেক কাজ পাওয়া যাচ্ছে।

কার্যপদ্ধতিঃ

১। ক্লায়েন্ট দুটি ক্যাটাগরিতে জব পোস্ট করতে পারে। কনটেস্ট আকারে বা প্রজেক্ট আকারে।
২। কনটেস্ট আকারে জব পোস্ট করলে ফ্রিল্যান্সার রা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কন্টেস্ট এ অংশগ্রহন করে এবং কাজ সাবমিট করে। ক্লায়েন্ট কাজগুলোর ভিতর পছন্দমাফিক কাজ বেছে নেয়।
৩। প্রোজেক্ট আকারে জব পোস্ট করলে ফ্রিল্যান্সার সংশ্লিষ্ট কাভার লেটার সহ বিড করতে পারে। ফ্রিল্যান্সারের করা বিড থেকে ক্লায়েন্ট যোগ্য প্রার্থী কে বেছে নেয় এবং প্রোজেক্ট শেষ করার পর ফ্রিল্যান্সার অর্থ পায়
৪। ফ্রিল্যান্সার ফ্রি তে বা ডলার খরচ করে বিড করতে পারে।
৫। ফ্রিল্যান্সার ঘন্টা চুক্তি বা প্রোজেক্ট অনুযায়ী কাজ পেতে পারে।

ফ্রিল্যান্সার কমিশনঃ

১০% পর্যন্ত

পেমেন্ট মেথডঃ

Payoneer, Paypal, Skrill, etc.

ওয়েবসাইটwww.freelancer.com

সিক্রেট টিপসঃ

১। আমেরিকান অফিশিয়াল টাইম একটিভ থাকা বাঞ্ছনীয়
২। ৫ স্টার রেটিং নতুন কাজ পেতে সাহায্য করে
৩। যত দ্রুত সম্ভব প্রথম কাজ পাওয়া উচিত।

সূত্র: Greetings! SEO Expert Md Faruk Khan.

একেবারে নতুনদের জন্য এই কোর্সটি উপযোগী । স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও অনলাইন ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং এ ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সততা আইটি ইনস্টিটিউট এর আরো কিছু প্রফেশনাল ট্রেইনিং রয়েছে। ট্রেইনিং গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন।

সততা আইটি ওয়েব সাইট

সততা আইটি ফেসবুক পেজ

freelancing course

Shohidul

শহিদুল

শহিদুল

শহিদুল

শহিদুল